shartnewsbd@gmail.com মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
১ পৌষ ১৪৩২

রোলার স্কেটিংয়ে দেড় কোটি টাকার হেরফের, দায়ী কে?

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ১৪ আগষ্ট ২০২৫ ১০:০৮ এএম

সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ বিক্রি। মাসিক পৌনে দুই লাখ টাকা। গত সাত বছর ধরে অভিবাবক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ফান্ডে নয়, এই অর্থ জমা হয়েছে রোলার স্কেটিংয়ের ফান্ডে। সাত বছরের হিসাবে প্রায় দেড় কোটি টাকা।

 এমন তছরুপের কারণে এবার নিজেদের ফান্ডে এই অর্থ জমা করতে রোলার স্কেটিংকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। সেই সঙ্গে এখন বিদ্যুৎ ক্রেতা ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীকে [ডিপিডিসি] নির্দেশ দিয়ে ক্রীড়া পরিষদ।


২০১৭ সালে আওয়ামী সরকারের ক্ষমতা ব্যবহার করে পলটনের মতো উন্মুক্ত খেলার জায়াগায় গড়ে তোলা হয় রোলার স্কেটিংয়ের মতো অখ্যাত একটি খেলার জন্য আলিশান স্টেডিয়াম। শেখ রাসেলের নামে প্রজেক্ট তৈরি করে ১১ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হয়েছিল এই কমপ্লেক্স। ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ছিল প্রকল্পের মেয়াদ। রহিম আফরোজ কোম্পানীর মাধ্যমে স্টেডিয়ামের ছাদে বসানো হয় ২০০ কিলোওয়াট বিদ্যুতের সোলার প্যানেল। তার আগেই ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে কমপ্লেক্সে উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নবনির্মিত এই কমপ্লেক্স উদ্বোধনের পর সেখানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল চতুর্থ রোলবল বিশ্বকাপ।

তৈরি করার পর ২০১৮ সালে রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্স ইনডোরের ছাদে স্থাপন করা হয়েছিল ২০০ কিলোওয়ার্ট পরিমান বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সোলার প্যানেল। তখন থেকেই এই প্যানেল থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ যোগ হয়ে আসছে জাতীয় গ্রিডে। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) সাথে চুক্তি অনুযায়ী উৎপাদিত বিদ্যুতের ১৮০০০ ইউনিটের বিপরীতে বর্তমান নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ৯.৯৩ টাকা হিসেবে মাসিক প্রায় পৌনে দুই লাখ টাকা পেয়ে আসছে রোলার স্কেটিং ফেডারেশন।

 

সাত বছর ধরে ডিপিডিসি এই টাকা বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশন বরাবর পরিশোধ করে আসছে। দীর্ঘ এই সময়ে এই টাকা পরিশোধের ঘটনা কিভাবে ঘটছে, সে বিষয়ে কোনো হেলদোল ছিল না জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের।

 

দীর্ঘ ৭ বছর পর টনক নড়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। এখন তাদের মনে হয়েছে, সোলার প্যানেল থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাবদ টাকা তো তাদের হিসেবে জমা হওয়ার কথা। কারণ, এই স্থাপনা সরকারের। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ দাবি করছে এই সোলার প্যানেল স্থাপনের খরচ তারাই দিয়েছে। তাই ডিপিডিসিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের বিপরীতে টাকা জমা দিতে হবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অনুকূলে।

 

৯.৯৩ টাকা ইউনিটের হিসাব অনুযায়ী এ পর্যন্ত ডিপিডিসি রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের অনুকুলে ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা জমা দিয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এই টাকার হিসাব চেয়ে চিঠি দিয়েছে রোলার স্কেটিং ফেডারেশনে। এছাড়া বুধবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) শফিকুল ইসলাম এক চিঠিতে ডিপিডিসিকে এখন থেকে রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সে স্থাপিত সোলার প্যানেল উৎপাদিত বিদ্যুতের বিপরীতে পরিশোধযোগ্য অর্থ তাদের প্রতিষ্ঠানের অনকূলে পরিশোধ করতে বলেছে।


রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সাবেক সাধারন সম্পাদক আহমেদ আসিফুল হাসান এ বিষয়ে, ‘স্টেডিয়াম ও সোলার প্যানেল বসানো- সবকিছুই সরকারী অর্থে হয়েছে এটা সত্যি। তবে অলিখিত একটি বিষয়ও ছিল যে, বিদ্যুৎ বিক্রির অর্থ দিয়ে ফেডারেশনের যাবতীয় খরচা মেটানো। সেটাই করেছি আমরা। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তখন তো কিছু বলেনি। রোলার স্কেটিংয়ের সাথে ডিপিডিসির চুক্তি হয়েছিল লিখিতভাবে। ফেডারেশনে সেই চুক্তি তো আছে। সেইভাবেই কাজ করেছি আমরা।’

 

গত মাসে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. জাহিদ হোসেনকে দিয়ে বিষয়টির অনুসন্ধান করিয়েছিল। ওই কর্মকর্তার প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে ডিপিডিসি থেকে বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের অনুকলে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার মতো জমা হওয়ার বিষয়টি।


সেই ২০১৮ সাল থেকে এই টাকা জমা হয়ে আসছে রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের অনুকুলে। অথচ স্থাপনাটি সরকারি বিধায় প্রথম মাস থেকেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অনুকূলে টাকা জমা হওয়ার কথা। তাহলে এতদিন এ বিষয়টি নিয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কেন তাগাদা দেয়নি?

 

জবাবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্বাহী পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম মিডিয়াকে বলেন, ‘আমি জানার পর গত সপ্তাহে বিষয়টির অনুসন্ধান করেছিলাম। আগে তথ্যটি আমাকে কেউ জানায়নি। এখন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের স্থাপনায় সোলার প্যানেল, সেখানে উৎপাদিত বিদ্যুতের বিপরীতে পরিশোধযোগ্য অর্থ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অনুকূলে জমা হওয়াই বাঞ্ছনীয়।’

 

ওএফ

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর